সূদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে স্যান্ডি রবসন বইঠা বেয়ে বাংলাদেশে আসেন। - সাইফ টেকটিউন্স ব্লগ

আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান

Breaking Tips

Saturday, December 27, 2014

সূদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে স্যান্ডি রবসন বইঠা বেয়ে বাংলাদেশে আসেন।

অস্ট্রেব দ্রলীয় কায়াকার স্যান্দদ্ররবসন।
জলপথে বিশ্বভ্রমণের অংশ
হিসেবে সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট
থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত কায়াক (সরু নৌকা)
চালনা শেষ করে এসেছিলেন ঢাকায়।

তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন পল্লব
মোহাইমেন

জাঙ্গু রিভার নাই’। অদ্ভুত এই
ইংরেজি বাক্যই ভয় দূর করেছিল
ভিনদেশি অভিযাত্রীর মন থেকে।
যেখানে সুন্দরবন সেখানে তো বাঘের ভয়
থাকাটা স্বাভাবিকই। অস্ট্রেলীয়
কায়াক অভিযাত্রী স্যান্ডি রবসনের
মনেও ঢুকেছিল সেই ভয়।
সঙ্গে কোনো বন্দুকও নেই। ‘সুন্দরবনের
কটকার পর বনঘেরা সরু এক খাল পার
হচ্ছিলাম। তখন বাঘের ভয় পেয়ে বসেছিল
আমাকে।’ ইংরেজি আর ইশারা ভাষায়
কয়েকজন জেলেকে জিজ্ঞেস
করেছিলেন আশপাশে বাঘ আছে কি না।
তখন তাঁরা বলেছিলেন, ‘টাইগার জাঙ্গু
রিভার নাই’। যার মানে, ‘টাইগার
জঙ্গলে, নদীতে নেই।’ নভেম্বর মাসের
শেষ দিকের ঘটনা এটা।
স্যান্ডি রবসন অস্ট্রেলীয় কায়াকার।
কায়াক হলো অতি সরু নৌকা। আমাদের
দেশে কিছু কিছু এলাকায় তালগাছের
কাণ্ডের
মাঝখানটা কুদে তৈরি যে ‘ডোঙা’
বা ‘চোঙা’ নৌকাগুলো দেখা যায়,
কায়াক তেমন। ক্যানু নৌকার সঙ্গেও এর
মিল আছে। চালক কায়াকের খোলের
মধ্যে বসে একটা বা জোড়া বইঠা দিয়ে ন
বইঠা বেয়ে সাগরপাড়ি
স্যান্ডি রবসন কায়াক
নিয়ে বেরিয়েছেন বিশ্বভ্রমণে। সেই
বিশ্বভ্রমণের অংশ হিসেবে এখন
স্যান্ডি আছেন বাংলাদেশে। সুন্দরবনের
হিরন পয়েন্ট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায়
৩৮৫ কিলোমিটার কায়াক চালানোর পর
ঢাকা এসেছিলেন মিয়ানমারের
ভিসা সংগ্রহ করতে।
বাংলাদেশে স্যান্ডির অভিযাত্রায়
সহযোগিতা করছে বেসরকারি সংস্থা স
বাংলাদেশ। ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার
বাংলামোটর এলাকায় সেফ
কার্যালয়ে কথা হয় স্যান্ডির সঙ্গে।
শ্রীলঙ্কা, ভারতের পর
বাংলাদেশে বেনাপোল সীমান্ত
দিয়ে আসেন গত ২০ নভেম্বর।
ট্রাকে করে আসে কারবন
ফাইবারে তৈরি স্যান্ডির কায়াক।
মংলা থেকে দি গাইড ট্যুরের
জাহাজে করে হিরন
পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর নৌকাটি।
২৩ নভেম্বর স্যান্ডি শুরু করেন
বাংলাদেশের সাগরে একাকী কায়াক
যাত্রা। এর আগে ভারতে সুন্দরবনের অপর
অংশ পর্যন্ত কায়াক চালিয়েছিলেন।
‘হিরন পয়েন্টে বন বিভাগ আমাকে স্বাগত
জানায়। চট্টগ্রাম পৌঁছাতে আমার
লেগেছে প্রায় দুই সপ্তাহ’।
এই দুই সপ্তাহের
নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে।
‘এখানে মানুষের ভিড় বেশি। প্রথম প্রথম
আমার ভয় লাগত, বিব্রত হতাম কিন্তু
পরে দেখলাম সবাই খুব আন্তরিক আর
অতিথিপরায়ণ।’ আলাপচারিতার
ফাঁকে সেফ বাংলাদেশের প্রধান
নির্বাহী মশিউর খন্দকার জানালেন,
নিঝুম দ্বীপে যখন স্যান্ডি কায়াক
ভেড়ান, তখন দেখেন সেখানে সব পুরুষ
জেলে। একজন নারীও ছিল না। সবাই
স্যান্ডিকে ঘিরে ধরে। তখন আমাদের
ফোন করেন তিনি। জেলেদের
সঙ্গে কথা বলে আমরা জানাই স্যান্ডির
এই অভিযাত্রার কথা। আবার কোথাও
কোথাও জেলেরা তাঁর পরিশ্রম
দেখে এনার্জি ড্রিঙ্ক এগিয়ে দিত।
স্যান্ডি ফোন করে জেনে নিত ওটা কী?
‘এক রাত তো চায়ের দোকানে ছিলাম।’
বলেন স্যান্ডি। সেটা সন্দ্বীপের এক
বাজারে। বেশির ভাগ রাতেই
থেকেছেন বন বিভাগ বা কোস্টগার্ডের
অফিসে। কখনো কোনো ঘূর্ণিঝড়
আশ্রয়কেন্দ্রে। শ্যালার চরের
কথা তো স্যান্ডি তাঁর ডায়েরিতেই
লিখে রেখেছেন। ‘সেখানকার
বনকর্মী মো. হক হাওলাদার
আমাকে “সিস্টার” ডেকেছেন।
এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।’
১৫ দিনের এ যাত্রায় স্যান্ডি রবসন হিরন
পয়েন্ট থেকে দুবলার চর, শ্যালার চর, কটকা,
কুয়াকাটা, সোনার চর, চর কুকড়িমুকড়ি,
নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, সন্দ্বীপ
হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছান। ইচ্ছে ছিল
মিয়ানমারের ভিসা পেলে টেকনাফ
হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়েই
সে দেশে ঘুরবেন। কিন্তু
ভিসা মেলেনি। বাংলাদেশের
বাকি উপকূলীয় রেখা ধরে আবার কায়াক
চালনা শুরু করেন ২০ ডিসেম্বর।
কুতুবদিয়া হয়ে কক্সবাজার চলে আসেন ২২
ডিসেম্বর। এ যাত্রা ১০০ কিলোমিটারের
বেশি পথ কায়াক চালান।
এখানে সার্ফার জাফরের আতিথেয়তায়
থেকে যান। ২৩ ডিসেম্বর ছিলেন
মারমেইড ইকো রিসোর্টে। ২৪ ডিসেম্বর
চলে যান টেকনাফের
কাছাকাছি হাসিমপাড়ায়। ২৫ ডিসেম্বর
স্যান্ডি কায়াক চালিয়ে পৌঁছে যান
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। বাংলাদেশ
থেকে স্যান্ডি যাবেন সিঙ্গাপুর।
সেখান থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার
সাগরে আবার শুরু হবে তাঁর কায়াক-
যাত্রা। স্যান্ডি বলছিলেন,
‘বাংলাদেশের উপকূলে প্রচুর ডলফিন
দেখেছি। চাঁদের আলো থাকায়
রাতে আমাকে টর্চ ব্যবহার করতে হয়নি এক
দিনও।’
স্যান্ডি ভাসালেন তরি
২০১১ সালে ১৪ মে জার্মানির উলম
থেকে শুরু হয় স্যান্ডির এই বিশ্বভ্রমণ। ‘১৯৩২
থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত করা জার্মান
অভিযাত্রী অস্কার পেকের কায়াক
চালনার রুট অনুসরণ করি। ৫০ হাজার
কিলোমিটারের এই যাত্রা তিনি শেষ
করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়।
আসলে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার
করেছিল মিত্র বাহিনী। বেশ কয়েক বছর
জেলে ছিলেন, তখন এই
অভিযাত্রা নিয়ে বই লেখেন অস্কার
পেক।’ বইটা পড়েই কায়াকে বিশ্বভ্রমণ
করার চিন্তাটা আসে স্যান্ডির মাথায়।
অস্কার পেক আবার সাঁতার জানতেন না।
স্যান্ডি পাড়ি দেবেন ২৫ হাজার
কিলোমিটার। শেষ হবে অস্ট্রেলিয়ার
পোর্ট মোরসবিতে। স্যান্ডির যাত্রাপথ
কমে গেছে, কারণ অনুমতি না পাওয়ায়
সিরিয়া ও ইরানের সমুদ্রপথ বাদ
দিতে হয়েছে তাঁকে।
১৯৬৮ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম
স্যান্ডির। বাবা নির্মাণ ব্যবসায়ী গর্ডন
রবসন বরাবরই উৎসাহ দেন স্যান্ডির এই
দঃসাহসিক অভিযাত্রায়।
তবে মা মার্গারেট রবসনের ভয়টাই বেশি।
স্যান্ডি বলেন, ‘ছোট বেলায় আমি কিন্তু
কায়াকিং করতাম না। একবার এক
ছুটিতে কায়াক চালিয়ে এতে উৎসাহ
পাই।’
পেশায় স্কুলশিক্ষক স্যান্ডি সার্ফিং ও
রোয়িং করতেও ভালোবাসেন। এখন
তো বিশ্বভ্রমণের
ফাঁকে ফাঁকে স্কুলে স্কুলে গিয়ে এসব
জলক্রীড়া শেখান বাচ্চাদের।
স্যান্ডি মনে করেন, পানির এসব খেলা ও
অভিযানে মেয়েদের আরও
বেশি করে আসা উচিত। এতে তাঁরা আরও
বেশি সুস্থ থাকবেন, আর শরীর ফিট
থাকবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরিও
এই বিশ্বভ্রমণের একটা উদ্দেশ্য।
দিনে কম-বেশি আট থেকে দশ
ঘণ্টা কায়াক চালান স্যান্ডি।
তিনি বললেন, ‘স্রোত
বেশি থাকলে বেশি দূর
যেতে পারি না। অনেক সময়
জেলে নৌকাগুলো কাছে এলে কায়াক
চালাতে ঝামেলা হয়। তবে আমি সব সময়
উপকূলরেখা থেকে সাগরে এক
কিলোমিটারের মধ্যেই থাকি।’
সাগরে একাকিত্ব পেয়ে বসে না?
স্যান্ডির উত্তর ‘তখন গান শুনি, বইঠা গুণি,
জিপিএসে গেম খেলি।’
স্যান্ডি এই বিশ্বভ্রমণে দুটি কায়াক
ব্যবহার করছেন। একটা সাধারণ।
আরেকটা ভাঁজ করে বয়ে বেড়ানো যায়
এমন কায়াক। একাকী এই সাগর-যাত্রায়
তাঁর সঙ্গে থাকে রান্না করার পাত্র,
সাত দিনের জন্য শুকনা খাবার, তাঁবু,
ফার্স্ট অ্যাইড বক্স, স্লিপিং ম্যাট,
ল্যাপটপ কম্পিউটার, লাইফ জ্যাকেট আর
জরুরি কিছু জিনিসপত্র।
কোনো স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করেন
না। সাধারণ মুঠোফোন শুধু থাকে একটা।
তাঁর মন্তব্য ‘এখন আমার কাছে এত
বেশি সিমকার্ড জমা হয়েছে, যে গলার
নেকলেস বানিয়ে পরতে পারব।’
যে দেশে যখন গেছেন সে দেশের
মুঠোফোনের সিম নিতে হয়েছে তাঁকে।
বিভিন্ন সংস্থা আর ব্যক্তি মানুষের
পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে তাঁর অভিযাত্রা।
নিজের ওয়েবসাইটে (www.sandy-
robson.com) লিখে যাচ্ছেন ব্লগ, দিচ্ছেন
ছবি—জানাচ্ছেন কতটা পথ
পাড়ি দিয়েছেন। স্যান্ডি রবসন তাঁর
কায়াক অভিযাত্রায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার
কিলোমিটারের বেশি সাগর
পাড়ি দিয়েছেন। প্রত্যাশা ২০১৬-
তে শেষ হবে তাঁর এই বিশ্বভ্রমণ। আট
দশকেরও বেশি সময় পর পুনরাবৃত হবে অস্কার
পেকের সেই অদম্য নৌযাত্রা।
বিঃদ্রঃ এই ক লামটি এখানে প্রকাশিত হয়েছে। ww.prothom-alo.com/we-are/article/408367/বইঠা-বেয়ে-বাংলাদেশে

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages